বৃহস্পতিবার, ৩১ Jul ২০২৫, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
বিরলে ভ্যান চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন।
মোছা তহমিনা বেগম বিউটি , দিনাজপুর প্রতিনিধি ===================================
সাম্প্রতিক দিনাজপুরে ঘটে যাওয়া কয়েকটি অপরাধের প্রকৃত রহস্য দ্রুততম সময়ে উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারে দিনাজপুর জেলা পুলিশ সফলতার পরিচয় দিয়েছে। সফল অভিযানগুলি ধারাবাহিকভাবে সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরায় জনমনে সচেতনতা বৃদ্ধি ও অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। আজকের উদঘাটিত ঘটনাটি ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারের মাধ্যমে জনমনে নিরাপত্তাবোধ বৃদ্ধি পাবে বলে দিনাজপুর জেলা পুলিশ মনে করে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৫ জুলাই- ২০২৫ তারিখে বিকাল ৪ টায় দিনাজপুর জেলার বিরল থানাধীন বিজোড়া ইউনিয়নের যুগিহারী গ্রামস্থ ভিকটিম তার নিজ বসত বাড়ী হতে নিজস্ব চার্জার ভ্যান নিয়ে ভাড়া খাটার জন্য বাড়ীর বাহিরে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিম আর বাড়ীতে ফেরত না আসলে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন খোঁজাখুজি করতে থাকে। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ১৬ জুলাই-২০২৫ তারিখে সকাল অনুমান ৭ টায় বিরল থানাধীন ৩নং ধামইর ইউনিয়নের অন্তর্গত মাটিয়ানদিঘী গ্রামস্থ সিতলা মন্দির এর পশ্চিম পার্শ্বে বাজনাহার হতে কাশিডাঙ্গাগামী পাকা রাস্তার উপর একটি মৃতদেহ পরে আছে মর্মে সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের পিতা ঘটনাস্থলে গিয়ে তার ছেলের মৃতদেহ সনাক্ত করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে ১৬/১৯৮ নং মামলা রুজু করা হয়। উক্ত সংবাদ পাওয়া মাত্রই বিরল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্য প্রযুক্তি ও সোর্স নিয়োগ করে আসামী সনাক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
মামলা রুজুর পরপরই পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন, এর দিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মোঃ আনোয়ার হোসেন এবং বিরল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুস ছবুর এর নেতৃত্বে এসআই (নিঃ) মোঃ সোহেল রানা এর সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও সোর্স নিয়োগ করে আসামী সনাক্ত ও ডিসিস্টের নিকট হতে লুষ্ঠিত চার্জার ভ্যান ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করার নিমিত্তে অভিযান শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায়, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ইং ২১ জুলাই- ২০২৫ তারিখ রাত অনুমান ৪.৩০ টায় বিরল থানাধীন মোতাপুকুর গ্রামস্থ আসামীর শ্বশুর বাড়ী হতে আসামী মোঃ নাজমুল হক মুন্নাকে গ্রেফতার করলে সে জানায় ডিসিস্ট আসাদুল হক ডিসিস্টের এলাকায় সাইকেল মেকানিক হিসেবে পরিচিত। সেই সুবাদে বছর খানেক আগে চানাচুর বিক্রির উদ্দেশ্যে একটি ঠেলা ভ্যান তৈরি করার জন্য ডিসিস্টের পরামর্শে আসামী মুন্না ৪(চার) টি চাকা ও এক্সেল কিনে ডিসিস্টকে সরবরাহ করেন। ডিসিস্ট ভ্যান তৈরি করা বাবদ ১২ হাজার টাকা অগ্রিম দাবি করলে আসামী মুন্না ডিসিস্টকে ৬ হাজার টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে ডিসিস্ট আসামীকে ভ্যান তৈরি না করে দিলে তার প্রতি আসামীর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভে আসামী ডিসিস্টের উক্ত ভ্যানটি ছিনিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে ঘটনার দিন মোঃ নাজমুল হক মুন্না ডিসিস্টকে মামলার ঘটনাস্থলে কৌশলে মালামাল বহন করার কথা বলে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর আনুমানিক রাত ৯ টায় আসামীর নিজ মোবাইল ফোন মাটিতে ফেলে দিয়ে ডিসিস্টকে খোঁজার জন্য বললে ডিসিস্ট মাথা নিচু করে মোবাইল ফোন খোঁজার চেষ্টা করলে আসামী পিছন দিক হতে তার নিকটে থাকা শরীরের মধ্যে লুকানো ধাঁরালো দা দিয়া ডিসিস্ট এর মাথায় এলোপাথারীভাবে কোপ মারতে থাকে। তখন ডিসিস্ট নিস্তেজ হয়ে পাকা রাস্তার উপর উপুর হয়ে পড়ে গেলে আসামী মুন্না তাহার হাতে থাকা দা টি পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেতে ফেলে দিয়ে ভিকটিমের চার্জার ভ্যানটি নিয়ে ২নং আসামী মোঃ রুবেল ইসলাম ওরফে সাহেব আলী এর নিকট যায়। তারা উভয়ে শলাপরামর্শ করে উক্ত চার্জার ভ্যানটি কৌশলে জনৈক কিনু দেব শর্মা নামক ব্যক্তির নিকট দরদাম ঠিক করে বিক্রির প্রস্তাব দিলে কিনু দেব শর্মা সরল বিশ্বাসে মোঃ নাজমুল হক মুন্নাকে মালিক জেনে ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ক্রয় করে। পরবর্তীতে মোঃ নাজমুল হক মুন্না ও মোঃ রুবেল ইসলাম নামক আসামীদ্বয়ের দেয়া তথ্য মতে কিনু দেব শর্মার বাড়ী হতে লুষ্ঠিত চার্জার ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়। ভ্যান উদ্ধার শেষে আসামী মুন্নার পূর্বে দেয়া তথ্য মতে তার দেখানো ধানক্ষেতে তল্লাশী করে ঘটনাস্থলের পাশ্ববর্তী জনৈক আফছান আলীর ধানক্ষেত হতে খুনের কাজে ব্যবহৃত দা টি উদ্ধার করা হয়।
খুনের সাথে জড়িত গ্রেফতারকৃত আসামী বিরল উপজেলার মজিবর রহমান এর ছেলে মোঃ নাজমুল হক মুন্না (৩২) ও বোচাগঞ্জ উপজেলার জালালী আটগাঁও গ্রামের মোঃ সলেমান আলী এর ছেলে মোঃ রুবেল ইসলাম।
উদ্ধারকৃত ভিকটিমের ১টি চার্জার ভ্যান, ভিকটিমের ১টি স্যাম্ফোনী বাটন মোবাইল ফোন ও খুনের কাজে ব্যবহৃত ১টি দাসহ আদালতে সোপর্দ করা হয়।